সন্ত্রাস না উল্লাসের বাংলাদেশ ? -মীর আব্দুল আলীম

লিখেছেন লিখেছেন মীর আলীমের কলাম ০৩ মার্চ, ২০১৩, ১০:১৬:০৯ সকাল



শান্তি-সুস্থিতির মানদন্ডে কোন জমানাটা তুলনায় ভালো? আগেরটা; না এটা? এ নিয়ে অযথা কলহ বাড়িয়ে লাভ নেই। বাঙ্গালীর ভাগ্য যে পোড়খাওয়া তা সহজেই বলতে পারি। স্বসি'্য মেলেনা কখনই। আজ এ সমস্যাতো, কাল ওসমস্যা। দেশে দাঙ্গা-হাঙ্গা ফ্যাসাদ লেগেই থাকে বারমাস। এখনকার সমস্যাটা একটু জটিল। একদিকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে সোচ্চার গোটা দেশ। অন্যদিকে বিচার বানচাল করতে মরিয়া জামায়াত-শিবির। দুষ্কৃতীরা কিঞ্চিৎ বেশিই বেপরোয়া বলা যায়। এতে রাজনীতির প্রাঙ্গনটিও যথেষ্ট কর্দমাক্ত। উত্তাল। লক্ষ লক্ষ মানুষ, যাঁদের এক বিরাট অংশ যুবা, ১ মাস ধরে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে রাজপথে; অন্য দিকে মরিয়া জামায়াত শিবির। অতি সম্প্রতি মুক্তিযুদ্ধের অপরাধী জামাত নেতা নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসেন সাইদির ফাঁসির রায়কে কেন্দ্র করে অগ্নিগর্ভ এখন বাংলাদেশ। মিছিল, পাল্টা মিছিলে উত্তাল দেশে সৃষ্ট সহিংসতায় জামাত-শিবিরের সমর্থক গোষ্ঠী ও পুলিশের সংঘর্ষে পুলিশকর্মীসহ এ ঘটনায় অনত্মত অর্ধশত প্রাণ হারিয়েছেন। আহতের সংখ্যা এক হাজারেরও বেশি। দেশের ৪২ বছরের ইতিহাসে আদালতের কোনো রায়কে কেন্দ্র করে এমন ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ার ঘটনা অতীতে কখনো ঘটেনি। আনত্মর্জাতিক অপরাধ আদালতে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে দেওয়া মৃত্যুদন্ডাদেশকে 'ন্যায়ভ্রষ্ট' ও 'রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত' বলে অভিহিত করেন তার আইনজীবী। এ রায়ের বিরম্নদ্ধে তারা আপিল করবেন বলেও জানিয়েছেন। এ ব্যাপারে বিএনপি মুখ না খুললেও সঙ্গীয় দলের নেতাদেও বাঁচাতে তাদের যে মৌনসমর্থন আছে তা বোঝা যায়। জামায়াত শিবিরের ৩ এবং ৪ ফেব্রয়ারী হরতাল দেবার পর ৫ তারিখে হরতাল ডাকাটা বিএনপির মোটেও সমোচিন হয়নি। হরতাল দেবার আগে রাজনৈতিক দলগুলোর অনত্মত দেশের মানুষের কষ্টের কথা ভাববার প্রয়োজন আছে। দলটির হরতাল দেবার প্রয়োজন পরলে তা তারা পরের সম্পাহেও দিতে পারতো। বিএনপি এ ব্যাপারে আর সংযমী হতে হবে। আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোকে সচরাচর সংযমি হতে দেখা যায় খুব কমই। এ ড়্গেত্রে বিএনপি বলি আর আওয়ামীলীগই বলি কেউই কম নয়। এটা দেশবাসীর দুভাগ্য।

সে যাই হউক, যুদ্ধারাধিদের বিচার বাঞ্চালের নামে জামায়াত শিবিরের দেশজুড়ে তান্ডব, রাজনৈতিক দলর গুলোর অসহিষ্ণু সংলাপ, বারাবাড়ি দেশেকে অন্ধকারের দিকেই ঠেলে দিচ্ছে। ব্যবসাবানিজ্যে ইতোমধ্যেই টান পরেছে। এভাবে চলতে থাকলে বড়ধরনের অর্থনীতি মন্দায় পরবে দেশ। আর তা আম-জনতা সহজ দৃষ্টিতে দেখবে এ কথা আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর ভাবা মানেই মূর্খামি। জনমানুষের নিরাপত্তা ও গণতান্ত্রিক ব্যবস'াকে টিকিয়ে রাখার স্বার্থে এ বিষয়ে সব পক্ষের সংযম একানত্মই প্রযোজন।সবার সুবিবেচনা ও সুমতি দেশ ও জাতিকে কঠিন সংকট থেকে রক্ষা করতে পারে। দানবীয় হরতালের কবলে দেশের সবচেয়ে বড় পাবলিক সার্ভিস পরীক্ষার্থীরা। নানা রকম বিড়ম্বনার শিকার ছাত্রছাত্রীরা, হরতাল জনতার আন্দোলনের অধিকার বলেন, আর মারণাযন্ত্র বলেন, সব সময় এই অস্ত্র প্রয়োগ শোভনীয় নয়। হরতাল যদি মানুষের নাগরিক অধিকারের মধ্যে পড়ে তাহলে কোমলমতি প্রায় ১৩ লাখ ছাত্রছাত্রীর নিভর্রহীনভাবে এবং আতঙ্কহীন অবস'ায় পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারে কিনা? যারা অনবরত গালবাজি করেন গণতন্ত্র এবং মানবাধিকারের জন্য। সেই রাজনৈতিকগণ জনগণের কাছে কতটুকু দায়বদ্ধ। নির্বিঘ্নে চলাফেরা করা মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারের মধ্যে পড়ে কিনা সাধারণ মানুষ তা জানতে চাই? শিক্ষাই জাতির মেরম্নদন্ড এই সার্বজনীন শব্দটি আমারা সরকারী এবং বিরোধী দলের সবাই মনে করি এবং সেস্নাগান হিসেবে ব্যবহার করি। কিনত্মু কাজে রূপদেই না।

একথা বলতেই হয় আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর ভুল সিদ্ধানেত্মর কারনে সংঘাতময় রাজনীতির দিকেই এগোবে দেশ। এতে গণতান্ত্রিক শাসনের কান্না ক্রমাগত বাড়তেই থাকবে। দেশের অগ্রগতি পিছিয়ে যাবে। রাষ্ট্র শাসকদের এটা অবশ্যই স্মরণ রাখতে হবে দেশে সংঘাতময় রাজনৈতিক পরিবেশ দীর্ঘায়িত হলে সামাজিক অসি'রতা বাড়বে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্‌িনত হবে। শিল্প কারখানায় উত্তেজনা বাড়বে ও উৎপাদন কমবে। ব্যবসা বাণিজ্যের বিপুল ক্ষতি হবে। মানুষের স্বাভাবিক নিরাপত্তা প্রতিনিয়ত ভুলুন্ঠিত হবে। দেশে অপশাসনের সুযোগ অবারিত ও উন্মুক্ত হবে। মুলত রাষ্ট্র ও মানুষের কল্যাণেই রাজনীতি। কিন' দেশে বিরাজিত রাজনৈতিক পরিবেশ যদি সে কল্যাণকে বিকশিত করতে না পারে তবে সে রাজনীতি ব্যর্থতায় পর্যবশিত হবে। মানুষ এমন রাজনীতির প্রতি আস'া হারাবে। একসময় প্রচন্ড বিদ্রোহে ফেটে পড়বে। তাই রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের আত্মমর্যাদা রক্ষা ও দেশের কল্যাণের কথা বিবেচনা করে সংঘাতের রাজনীতি পরিহার করে সুস' রাজনীতির পরশে দেশের মানুষের জীবন মানের উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়টি নতুন নয়। বাংলাদেশ গঠনের সময় থেকেই রাজাকারদের বিচারের দাবি ওঠে। বস'ত ট্রাইবুনালটি গঠন করা হয় ১৯৭৩-এ। কিন' ১৯৭৫-এ সে দেশের মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক ও প্রথম প্রেসিডেন্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার পরে এই বিচার আর সম্পূর্ণ হয়নি। ২০০৮-এ আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসার পরই বিষয়টি ফের এগিয়ে নিয়ে যাওয়া শুরম্ন হয়। এই প্রেক্ষিতেই চলতি বছরের ৫ ফেব্রুয়ারির গণ-উত্থান ও পাল্টা আন্দোলন শুরম্ন হয়। তাদের দাবি, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় যাঁরা পাকিসত্মানের সেনার সঙ্গে হাত মিলিয়ে সে দেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিলেন এবং মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যার ষড়যন্ত্রে দোষী সাব্যসত্ম হয়েছেন তাঁদের মৃত্যুদন্ড চাই৷ যদিও এই আন্দোলনের শিকড় দীর্ঘ, বর্তমান গণ-অসনেত্মাষের শুরম্ন ৫ ফেব্রুয়ারি৷ এই সব অপরাধে অভিযুক্তদের- বাংলাদেশে যাঁদের 'রাজাকার' বলা হয়- বিচারের জন্য বাংলাদেশ সরকার-গঠিত 'আনত্মর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল' ওই দিন জামাত-ই-ইসলামি দলের নেতা আব্দুল কাদের মোলস্নাকে ১৯৭১-এ গণহত্যা-সহ একাধিক অপরাধে দোষী সাব্যসত্ম করে তাঁকে যাবজ্জীবন কারাবাসে দন্ডিত করে। আন্দোলনকারীদের মতে এই শাসিত্ম যথেষ্ট নয়। তাঁরা মোলস্না ও অপরাপর রাজাকারদের প্রাণদন্ড চান। ১ ফেব্রয়ারী দেলোয়ার হোসেন সাইদীর রায়ে তারা মহা খুশী। এই দাবি নিয়েই রাজধানী ঢাকার শাহবাগ স্কোয়ার-সহ দেশের বিভিন্ন শহরে লক্ষাধিক মানুষ প্রতিবাদে সোচ্চার হয়। তাঁদের আরও দাবি ধর্মীয় দল জামাত-ই-ইসলামি-র রাজনৈতিক কার্যকলাপ নিষিদ্ধ করতে হবে।

যুদ্ধাপরাধীদের উপযুক্ত বিচার হওয়ার প্রশ্নটা জাতীয়, দলীয় নয়। উদ্দেশ্যটা ভাল। উদ্দেশ্য যত মহৎই হোক, কোনো উসিলাতেই, কোনো অজুহাতেই রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের দিকে বাংলাদেশকে ঠেলে দেয়া যাবে না। সংযমী হতে হবে। আমরা বাঙ্গালীরা জানি, রাজনীতি মানেই ক্ষমতায় যাওয়ার এবং অননত্মকাল টিকে থাকার খেলা। এই খেলা বন্ধ হওয়া দরকার। যুদ্ধাপরাধের বিচারের সঙ্গে ক্ষমতায় যাওয়ার/থাকার সমীকরণ বাদ দিয়ে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোকে দেশের কথা বেশী বেশী ভাবতে হবে। বিরোধীদলের যেমন উচিত, সরকারের উচিত জামায়াতকে বাদ দিয়ে বাকি সব দলগুলো নিয়ে 'জাতীয় সঙ্কট মোকাবেলা কমিটি' গঠন করা; সংকট উত্তরনে আলোচনা করা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তাই ধৈর্য ও বিচড়্গণতার সঙ্গে পরিসি'তি সামাল দিতে হবে। দেশপ্রেমিক সকল নাগরিকেরও দায়িত্ব চলমান নৈরাজ্যের বিরম্নদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা। এ মুহূর্তে সবচেয়ে বেশী দরকার তা হলো আমাদেও রাজনৈতিক দলগুলোকে আনত্মরিক ভাবে সংলাপের বসা। আর এর কোন বিকল্প নেই।

ক্স (লেখক- মীর আব্দুল আলীম, কলাম লেখক ও সম্পাদক- নিউজ-বাংলাদেশ ডটকম। ব-সধরষ-হবংিংঃড়ৎব০৯@মসধরষ.পড়স <সধরষঃড়:হবংিংঃড়ৎব০৯@মসধরষ.পড়স>)

বিষয়: রাজনীতি

৮৮৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File